শিবলিঙ্গ আসলে কী? এর সাথে কালীমূর্তির কী সম্পর্ক?

profile
Uttoran Roychowdhury
Jul 08, 2022   •  7 views

অথর্ব বেদে বলা হয়েছে যে স্তম্ভ আকারের এই লিঙ্গ হল অনাদি-অনন্ত নিরাকার ব্রহ্মের প্রতীকী রূপ। "লিঙ্গ" শব্দটির অর্থ "প্রতীক" বা "চিহ্ন", যার দ্বারা কোনোকিছুকে পৃথকভাবে চেনা যায়।

শিব হলেন নিরাকার চৈতন্যস্বরূপ পরমপুরুষ (চৈতন্য অর্থাৎ Consciousness)। শক্তি হলেন গতিময় পরমাপ্রকৃতি – তিনিও আসলে নিরাকার, তবে সমস্ত আকারও তাঁর থেকেই ব্যক্ত হয়েছে।

এই নিরাকার শিব-শক্তির আরাধনা করতে একটি 'রূপ' প্রয়োজন, যার দ্বারা স্বতন্ত্রভাবে তাঁদের চিহ্নিত করা যায় এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে পুজো দেওয়া যায়। প্রাচীনকালে তখন এমন চিহ্ন বা লিঙ্গকে বেছে নেওয়া হয় যাঁর মাধ্যমে আমরা পুরুষ ও প্রকৃতিকে খুব সহজেই পৃথকভাবে বুঝতে পারি, আর সেই কারণেই শিবলিঙ্গে আমরা শিব ও শক্তির এমন (লিঙ্গ-যোনি জাতীয়) রূপ দেখে থাকি। আবার লিঙ্গের এই দণ্ডায়মান স্তম্ভের ন্যায় আকৃতি শিবের নির্বিকার ও নিশ্চল অবস্থাকেই বোঝায়। অন্যদিকে শক্তির এই "যোনি"-রূপী প্রতীক বোঝায় যে পরমাপ্রকৃতি থেকেই এই সমগ্র জগতের জন্ম, কারণ যোনির অর্থ উৎস বা যেখান থেকে জন্ম হয়।

তাই মনে রাখতে হবে এই লিঙ্গ শুধুমাত্র ঈশ্বরের উপাসনার একটি প্রতীক, এখানে শিব বা শক্তির জননাঙ্গ একেবারেই দেখানো হচ্ছে না, কোনো জননাঙ্গের উপাসনা এখানে হচ্ছে না।

এখন প্রশ্ন হল যে তাই যদি হয়, তবে শিবলিঙ্গে আমরা শিব ও শক্তির প্রতীকের এই মিলিত অবস্থা কেন দেখতে পাই? আসুন দেখে নিই এই মিলনের প্রকৃত কারণ।

এই পরমপুরুষ তাঁর আলোয় শক্তির লীলাকে প্রতিভাত করেন এবং নিজেই তাঁর সাক্ষী হয়ে থাকেন, তবে নির্বিকার নিশ্চল হওয়ায় নিজেকে কোনোভাবেই ব্যক্ত করতে পারেন না। আবার পরমাপ্রকৃতি তাঁর অশেষ গতিময়তা দ্বারা নিজেকে নানা রূপে ব্যক্ত করতে পারেন, কিন্তু চৈতন্যস্বরূপ শিব ব্যতীত তাঁর সেই লীলা প্রকাশিত হয় না এবং সেই লীলার কোনো সাক্ষীও থাকে না। তাই এই দুই আসলে অবিচ্ছেদ্য এবং এই দুইয়ের মিলন ছাড়া এই সৃষ্টির খেলা সম্ভব নয়। শিবের দ্বারা শক্তি প্রকাশিত ও অনুভূত হন, এবং শক্তির মাধ্যমে শিব ব্যক্ত হন – এবং এই দুইয়ের একটিকে ছাড়া অন্যটিকে বোঝা সম্ভব না। তাই শিব-শক্তির মিলন দেখানো হয়েছে শিবলিঙ্গে।

শুধু লিঙ্গেই নয়, একই দর্শনের উপস্থিতি রয়েছে কালীমূর্তিতেও। মা কালীর মূর্তির দিকে যদি একবার তাকাই তবে দেখব যে কালী হলেন এক প্রচণ্ড গতিময় শক্তি যিনি অসুর সংহার করেন আবার ভক্তকে বরাভয় প্রদান করেন, সৃষ্টি-স্থিতি-বিনাশ তাঁর নিত্য ক্রীড়া যেন - আর তাঁর সেই লীলার সাক্ষী হিসেবে তাঁরই পদতলে শবের মতো রয়েছেন শিব। সেই এক, অবিভাজ্য, অনন্ত পরম সত্তার দুই ভিন্ন প্রকাশ – নির্বিকার নিশ্চল চৈতন্যস্বরূপ সাক্ষী এবং সৃষ্টি-স্থিতি-বিনাশের লীলাবিশিষ্ট প্রকৃতি।

শক্তিই সেই বীজ অবস্থা বা 'কারণ' যাঁর থেকে এই জগতের আবির্ভাব, আবার তাঁর মধ্যেই বিলীন হয়ে অব্যক্ত অবস্থায় ফিরে যায় সবকিছু। অর্থাৎ সৃষ্টির পূর্বে এবং লয়ের পরে যখন জগৎ তো দূর, দেশ-কাল (Space-time) কিছুই নেই তখনও তিনিই রয়েছেন। সেই অব্যক্ত প্রকৃতির শূন্যতাকে কালো রঙ দ্বারা বোঝানো হয়। অন্যদিকে মহাদেব হলেন গৌর বর্ণের, কারণ তিনি চৈতন্যস্বরূপ, তাঁর আলোতেই শক্তির এই অবিরত খেলা প্রকাশিত হয়।

(ঠাকুরের কৃপায় যতটুকু জেনেছি, বুঝেছি সেটাই নিজের ভাষায় লেখার চেষ্টা করলাম)

0



  0