অনেকে বলেন "সব ধর্মই এক" - কথাটা কি ঠিক? কী বলছেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ?

profile
Uttoran Roychowdhury
Feb 24, 2020   •  29 views

আজকাল secularism-এর নামে একটা কথার খুব প্রচলন হয়েছে যে “সব ধর্মই এক”। এই কথার সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে টেনে আনা হয় ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে। কিন্তু তিনি কি সত্যিই এহেন কোনো কথা বলেছেন? আসলে তাঁর যে উক্তিটিকে তুলে এনে যুক্তি হিসেবে খাঁড়া করা হয় তা হল সকলের পরিচিত সেই “যত মত তত পথ” — এবং ঠিক এখানেই অনেকে বুঝতে সম্পূর্ণ ভুল করে থাকেন। আমরা এই ক্ষেত্রে তাঁরই মুখনিঃসৃত একটি উপমা দেখতে পাই। তিনি বলছেন, “যেমন ‘জল’ ‘ওয়াটার’ ‘পানি’। এক পুকুরে তিন-চার ঘাট; এক ঘাটে হিন্দুরা জল খায়, তারা বলে ‘জল’। এক ঘাটে মুসলমানেরা জল খায়, তারা বলে ‘পানি’। আর এক ঘাটে ইংরেজরা জল খায়, তারা বলে ‘ওয়াটার’। তিন-ই এক, কেবল নামে তফাৎ। তাঁকে কেউ বলছে ‘আল্লাহ্‌’, কেউ ‘গড্‌’, কেউ বলছে ‘ব্রহ্ম’, কেউ ‘কালী’, কেউ বলছে রাম, হরি, যীশু, দুর্গা।” এখানে তিনি উপমা দিতে গিয়ে কখনও বলেননি যে একই ঘাটে তিনজন জলপান করতে এসেছে, তিনি তিনটে আলাদা ঘাটের মধ্যে দিয়ে তিনটে আলাদা পথ বোঝাচ্ছেন। অর্থাৎ এই তিনটি ঘাটের কোনো একটিতে যে ব্যক্তি আসছে সে তার ধর্ম ও ভাষা অনুযায়ী সেই পানীয়কে সম্বোধন করছে, কিন্তু শেষ অবধি সকলে সেই একই পুকুরে পৌঁছে একই জল পান করছে। মত ও পথ অনুসারে একই বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন নাম কারণ প্রতিটি মত ও পথ অপরগুলির থেকে ভিন্ন। প্রতিটি ধর্মের মতবাদ আলাদা, সেই অনুযায়ী ধর্মগুলির পথও আলাদা, কিন্তু তাদের মূল উদ্দেশ্য? তাদের গন্তব্য? এই প্রতিটা পথেরই প্রথম, প্রধান ও শেষ উদ্দেশ্য হল সেই এক, অনন্ত, পরম সত্যকে লাভ করা। তিনি অনন্ত, তাঁর অনন্ত ভাব প্রকাশিত এই জগতে, তাই তাঁর কাছে পৌঁছোনোর পথও অনন্ত। সেই অনন্ত সত্যকে যে কেউ যেকোনো নামে ডাকতে পারে — ‘ব্রহ্ম’, ‘আল্লাহ্‌’, ‘গড্‌’, ‘কালী’, কিন্তু সর্বোপরি মনে রাখতে হবে যে তিনি ‘এক’।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতে চেয়েছেন যে ‘অনন্ত পথ, অনন্ত মত’, তবে সব পথেরই গন্তব্য সেই এক, অনন্ত সত্য। কোনো একটি মত দাবি করতে পারেনা যে সেটিই একমাত্র পথ সেই সত্যকে সম্পূর্ণরূপে জানার, এবং এটাও মনে রাখতে হবে যে শেষ অবধি পথটা মূল উদ্দেশ্য নয়, গন্তব্যটাই মূল উদ্দেশ্য।

তাই, সব ধর্ম এক নয়, একেক ধর্মের মত ও পথ একেকরকম, কিন্তু তাদের প্রধান উদ্দেশ্যটা একই — এইভাবেই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁর ‘যত মত তত পথ’ বাণীর মাধ্যমে।

1



  1